




পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামের শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম-তাসলিমা খাতুনের যমজ মেয়ে রাবেয়া-রোকাইয়া। ২০১৬ সালের ১৬ জুন তাদের জন্ম হয়। জন্ম থেকেই এই দুই শিশুর মাথা জোড়া লাগানো ছিল। চিকিৎসকদের





মতে এ ধরনের অপারেশন সারাবিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। চিকিৎসকদের মতে প্রতি পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়ন শিশুর মধ্যে একজনের এ ধরনের বিরল রোগ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটিকে ‘ক্রেনিয় পেগাজ’ বলে। মাথা জোড়া যমজ শিশুর বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, ওদের মায়ের সিজার





করার আগের দিন পর্যন্ত জানতে পারিনি যে, পেটের মধ্যে এমন যমজ শিশু আছে। এমনকি ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাফী করা হলে তাতেও ধরা পড়েনি। আমরা চেয়েছিলাম সুস্থ সুন্দর ভাল একটা বাচ্চা। কিন্তু এটা আশা করিনি এমন ধরনের বাচ্চা হবে। জন্মের কিছুদিন পর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তারা শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক





সার্জারি ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিল। অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই এদেশের চিকিৎসকরা কয়েক দফায় চেষ্টা
করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওদের হাঙ্গেরি পাঠানো সম্ভব হয়। প্রধানমন্ত্রী রাবেয়া-রোকাইয়ার পুরো চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন। এছাড়া





চিকিৎসায় সার্বিক সহযোগিতা দেয় হাঙ্গেরির দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন ফর ডিফেন্স পিউপল ফাউন্ডেশন। ২০১৯ সালের ০১-০৩ আগস্ট রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩৩ ঘণ্টার ‘অপারেশন ফ্রিডম’ নামের জটিল খুলি ও ব্রেন অপারেশনে ৩৫ জন হাঙ্গেরিয়ান সার্জিক্যাল টিম এবং হাঙ্গেরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে সিএমএইচের নিউরো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, নিউরো ও প্লাস্টিক সার্জনসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স





ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের শতাধিক সার্জন ও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট অংশ নেন। চিকিৎসক দলের প্রধান ছিলেন আন্দ্রেস কসোকে। মূল অপারেশনের পরে বিভিন্ন ধাপে শিশু দু’টির আরো বেশ কয়েকটি অপারেশন সম্পন্ন হয়। সবশেষ ২০২০ এর ২৮ অক্টোবর তাদের ৪র্থ ধাপের অপারেশন হয়। জন্মগত কিছু ত্রুটি ছাড়া শিশু দু’টি বর্তমানে প্রায় সুস্থ আছে বলে শিশু দুটির বাবা জানান। রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন রাবেয়া-রোকাইয়া। সেখানে





দুই স্তরে তাদের মস্তিষ্কের রক্তনালিতে অপারেশন করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শিশু দু’টিকে হাঙ্গেরি পাঠানো হয়। হাঙ্গেরিতেও শিশু দু’টির ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি অ;স্ত্রোপ;চার করা হয়েছিল। শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম-তাসলিমা খাতুনের জোড়া মাথার সন্তান রাবেয়া-রোকাইয়া সোমবার বাড়ি ফিরেছে। জোড়া মাথার বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবন নিয়ে ফিরেছে। দীর্ঘদিনের চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা আলাদা হয়ে সাড়ে তিন বছর পর শিশু দুটি বাড়ি ফিরলো। এখন ওদের বয়স ৪ বছর ৩ মাস। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটা





নাগাদ বাড়িতে পৌঁছার পর স্বজন-প্রতিবেশিরা যেভাবে তাদের ফুলের শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। তিনি জানান, তাদের পরিবারের পাশাপাশি রাবেয়া-রোকেয়াকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত গোটা গ্রাম।রফিকুল ইসলাম বলেন, এই আনন্দের উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
রাবেয়া রোকেয়ার মা তাসলিমা খাতুন জানান, তাদের পরিবার সবার ভালবাসায় মুগ্ধ বলে জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সব ব্যয়ভার না নিলে তাদের পক্ষে এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসার কথা ভাবতেও পারতেন না। তিনি জানান, এমন জোড়া মাথার বাবা- মারা যেন হতাশ না হয়। এর আধুনিক চিকিৎসা





রয়েছে। যার প্রমাণ তার মেয়েরা। তাসলিমা খাতুন আরো জানান, তাদের জোড়া মাথা আলাদা করার পর যদি ওরা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে সেটা আমাদের জীবনে সবচেয়ে খুশির খবর
হবে। রাবেয়া রোকাইয়াকে দেখতে এসে অনেকেই ইরানের জোড়া মাথার যমজ লাদান- লালাহ বোনদ্বয়ের কথা স্মরণ করতেন




